কীরণ বাজারের একজন ব্যবসায়ী । তার আচরণে গ্রাহক, সরবরাহকারী, প্রতিবেশি ব্যবসায়ী, বাজার কর্তৃপক্ষ কেউই সন্তুষ্ট নয় । তা হলে প্রতিযোগিতার বাজারে কীরণের ব্যবসায়টা কী ভালো চলবে? অসম্ভব। ধরো বাজারের দক্ষ ব্যবসায়ী দোলনের ওপর সবাই সন্তুষ্ট। সবাই তাকে সহযোগিতা করে। তবে নিঃসন্দেহে দোলনের ব্যবসায়টা ভালো চলবে । এই ভালো চলার পিছনে যারা সহযোগিতা করলো তাদের প্রতি যদি দোলন কৃতজ্ঞ হয়, তাদের প্রতি তার দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করে, সাধ্যানুযায়ী দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয় তাহলে সমাজের এই পারে সদস্যরা কী আরও সন্তুষ্ট হবে না? আরও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে না? এই যে সমাজের প্রতি, বশ স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ (Stackholders) এর প্রতি দোলনের বা তার ব্যবসায়ের দায়িত্ব পালনের অনুভুতি একেই ব্যবসায়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে দেখা হয় ।
দায় হলো কোনো কর্ম সম্পাদনের বা কর্তব্য পালনের দায়, আবশ্যকতা বা গরজ । তাই ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা হলো সমাজ ও সমাজ সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের প্রতি ব্যবসায়ের কর্তব্য পালনের দায় যা সমাজ থেকে প্রাপ্ত নানান সুবিধা ও সহযোগিতার বিপক্ষে তার করা উচিত। ব্যবসায় সমাজবিজ্ঞানের একটা গুরুত্বপূর্ণ শাখা । সমাজের মানুষগুলোকে পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে মুনাফা অর্জন করাই তার উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য পূরণে গ্রাহক বা ক্রেতার বাইরেও তার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান; যেমন- শ্রমিক-কর্মী, ঋণদাতা, পণ্য বা কাঁচামাল সরবরাহকারী, প্রতিবেশি ব্যবসায়ী, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সরকার ইত্যাদি পক্ষের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে । এই সহযোগিতা পাওয়ার জন্য বা প্রাপ্তির প্রতিদান হিসেবে ব্যবসায় সাধ্যানুযায়ী নানান ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করে। এর সবই ব্যবসায়ের সামাজিক দায়িত্ব পালন হিসেবে দেখা হয়ে থাকে । এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যবসায়ী নিজেও সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সে নিজের সন্তানদের জন্য যেমনি ভেজাল গুড়ো দুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পছন্দ করে না অন্যের জন্যও তার এটাই চাওয়া উচিত । সচেতন মানুষ হিসেবে তার কর্তব্য হলো নীতি- নৈতিকতা মেনে ব্যবসায় চালানো । আর এটাও তার সামাজিক দায়বদ্ধতারই অংশ ।